শীতের শুরুতেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়।বসন্ত যেমন আসে কোকিলের কন্ঠে আগমনী বার্তা নিয়ে, তেমনি সর্ব উত্তরে শীতকালের আগমন ঘটে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য নিয়ে।
যারা প্রকৃত অর্থে প্রকৃতিপ্রেমী,প্রকৃতিকে মন থেকে ভালোবাসে,তারা কখনোই নিজ গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকতে পারে না,প্রকৃতির টানে বারবার ছুটে আসে।মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্যটি অত্যন্ত চমৎকার ভাবে উপভোগ করা যায় সর্ব উত্তরের জেলা হিমালয় কন্যা পঞ্চগড় থেকে।আবহাওয়া ভালো থাকলে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে দেখা গেলেও একবারে স্পষ্টভাবে দেখা যায় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী স্থান তেতুলিয়ার ডাক বাংলো থেকে।ভঙ্গিময় কিশলয়ের হিলাদুলা,দীপ্তিময় আলোকের ঝলকানি সবার মন কেড়ে নেয়।
পঞ্চগড় থেকে যে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়-এ বিষয় নিয়ে যারা উপহাস করছেন তাদের বলছি আপনারা শুধু চোখ দিয়ে না হৃদয় দিয়ে বিষয়টি দেখুন,প্রকৃতিকে মন থেকে অনুভব করুন, তাহলেই বিষয়টি একবারে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। প্রতিবছরের মতো এবারও আমি ডাক বাংলোয় গিয়েছিলাম নিজ চোখে অনুপম প্রাকৃতিক লীলাভূমি উপভোগ করার জন্য।
খুব সকালে প্রথমেই পৌছলাম ডাক বাংলোয়। গাড়ি থেকে নামতেই অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘা চোখে পড়লো।কী মনোরম দৃশ্য!কিছুক্ষণ একদৃষ্টে চেয়ে রইলাম।একঝাঁক পাখি কিচির মিচির শব্দে উড়ে গেল দূর আকাশে।একটু এগিয়ে মহানন্দার পাড়ে গেলাম।সেখান থেকে মনে হচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা একদম কাছে,একবারে হাতের নাগালে।সেই সাথে মহানন্দার স্নিগ্ধ শীতল ঢেউ।হৃদয় জুড়ানো নিসর্গের এই পরিবেশে মনটা একদম জুড়িয়ে গেল।
ভারত থেকেও এভাবেই অনেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছে। দুই বাংলা বললেও বাংলা মূলত একটাই।দুই গণ্ডির মানুষের একে অপরের সংস্কৃতি,সাহিত্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগবে এটাই স্বাভাবিক।হয়তো বা ভৌগলিক সীমানা আমাদের আবদ্ধ রেখেছে,কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের আটকে রাখতে পারে নি।
রৌশনপুরে বিশাল এলাকা জুড়ে চা বাগান।চারপাশে সবুজে সবুজ,সবুজের সমারোহ।কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সাথে সাথে এই মনোরাম চা বাগান দেখতেও ব্যাপক পর্যটকের সমাবেশ ঘটেছে। হাতে ডিএসএলআর বা কোনো দুর্লভ ক্যামেরা ছিল না।সাধারণ ফোন ক্যামেরা দিয়েই কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রচুর ছবি তুললাম। সারাদিন কেটে গেল ডাক বাংলো,রৌশনপুর আর আনন্দধারায়।বেলা গড়িয়ে গেল।এখন ফিরে আসার পালা।
সত্যি সময়টা খুব নিঠুর।কারও জন্য এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে না।ফিরতে হবে এটা ভেবে একদম মন খারাপ হয়ে গেল।ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফিরে এলাম। সুন্দর মুহূর্ত আসে আর সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাড়াতাড়ি বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু সেই স্মৃতি চিরকাল থেকে যায় হৃদয়ের গহীনে।
লেখাঃ প্রণব শর্মা